13,2021 Wednesday at 10:56:59 | Share |
করোনায় 'রেমডেসিভির' ব্যবহারে সম্ভাবনা, দেশে উৎপাদন অনুমতি পেল ৬ কোম্পানি

করোনা মোকাবিলায় গত কয়েক দিনে বার বার উঠে এসেছে ‘রেমডেসিভির’ ওযুধের নাম। করোনা আক্রান্তদের উপর জরুরিকালীন ভিত্তিতে এ বার এই ওযুধ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিল হোয়াইট হাউস।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এ কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিন কয়েক আগে চিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ওষুধ ব্যর্থ বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেই শীর্ষস্থানীয় মার্কিন মহামারি বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফসি দাবি করেন, এই অ্যান্টিভাইরাল ওযুধটি করোনা-চিকিৎসায় কাজ দিচ্ছে। তার পর সারা বিশ্বের চিকিৎসক মহলে আলোচনা শুরু হয় রেমডেসিভিরকে নিয়ে।
করোনার থাবার বিশ্ব জুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ লক্ষ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। করোনা থেকে মুক্তি কী ভাবে মিলবে তা নিয়ে যখন সারা বিশ্ব কমবেশি দিশেহারা, তখন ফসি দাবি করেন, ‘‘আমরা বহু পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে।’’ এই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হয়নি বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এই দাবিই করোনা প্রতিরোধে আশার আলো দেখায়।
এর পরই হোয়াইট হাউসের তরফে মিলল রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যা়ডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-র তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর, যাদের রক্তে অক্সিজেনের হার ব্যাপক ভাবে কমে গিয়েছে, যাদের ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে তাদের উপরেই প্রথম প্রয়োগ করা হবে এই ওষুধ।
শুক্রবার এফডিএ-এর কমিশনার স্টিফেন হানকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। করোনা মোকাবিলায় এই ওযুধের ব্যবহারকে ‘খুব আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। রেমডেসিভির তৈরির পিছনে রয়েছে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গিলিড সায়েন্সেস। গিলিডের সিইও ড্যানিয়েল ও’ডে বলেছেন, “হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের উপর প্রথম ব্যবহার করা হবে এটি।” এই ওষুধের প্রথম ১৫ লক্ষ ডোজ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল গিলিড।
আক্রান্তের শরীরে কী ভাবে কাজ করবে ‘রেমডেসিভির’?
চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানাচ্ছেন, যে কোনও অ্যান্টি ভাইরালের কাজই হচ্ছে শরীরে বাসা বাঁধা ভাইরাসকে ধ্বংস করা এবং তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও একই রকম ভাবে করোনা-আক্রান্তের শরীরে ওই মারণ ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখে সংক্রমণ ঠেকাবে রেমডেসিভির। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কোনও ভাইরাস মানবদেহের কোষে প্রবেশ করে তার ভিতর বংশবৃদ্ধি চালিয়ে সেই কোষটিকে ধ্বংস করে। তার পর সে আক্রমণ চালায় পাশের কোষে। এ ভাবেই একের পর এক কোষ ধ্বংস করে সে। আর মারণ ভাইরাস নিয়ে যায় মৃত্যুর পথে। কিন্তু অ্যান্টি ভাইরালের কাজ হল, আক্রান্ত কোষে ঢুকে আগেই ওই ভাইরাসকে ধ্বংস করা। তার বংশবৃদ্ধি আটকে দেওয়া। ফলে ভাইরাসটি আর অন্য কোষকে আক্রমণ করতে পারবে না। এতে সংক্রমণ রুখে দেওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আসলে করোনার ঘরে ঢুকে তাকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে এই অ্যান্টি ভাইরাল।’’ রেমডেসিভির প্রয়োগ নিয়ে আমেরিকার সিদ্ধান্তের পর তিনি বলেছেন, ‘‘এ যেন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’। আশা করব এখান থেকেই বিশ্বমানবতার নতুন পথচলা শুরু হবে। আরও অনেক ওষুধ আসবে অচিরেই। এটা একটা মাইলস্টোন।’’
ইতিমধ্যেই বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ। রেমডেসিভির ব্যবহার এই মৃত্যুমিছিলে রাশ টানতে পারে কি না সেটাই দেখার। খবর আনন্দ বাজারের।
এদিকে, বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর করোনা প্রতিরোধে সম্ভাব্য এই ওষুধটি উৎপাদনে দেশের ৬টি কোম্পানি বেক্সিমকো, বীকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার ও হেলথকেয়ারকে উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে । এ মাসেই উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোম্পানিগুলোকে এই ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কাঁচামাল আমদানি করে এ মাসের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করবে এসকে-এফ ও বেক্সিমকো।
ওষুধগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ওষুধটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বলে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় 'রেমডেসিভির' ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ ভালো কাজ করার ইতিহাস রয়েছে ওষুধটির।
User Comments



- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা